আরও দেখুন
তৃতীয় প্রান্তিকে ইউরোজোনের জিডিপি 0.4% প্রবৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে, যেখানে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ এই সূচকের 0.2% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এটি ২০২২ সালের শুরুর পর থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির হার, যখন ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইউরোপীয় অর্থনীতি 0.8% বৃদ্ধি পেয়েছিল। বার্ষিক ভিত্তিতে, ইউরোজোনের জিডিপি 0.9% বৃদ্ধি পেয়েছে (পূর্বাভাস: 0.8%), যা ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির হার। প্রতিবেদনে দেখা যায়, তৃতীয় প্রান্তিকে স্পেনের জিডিপি 0.8%, ফ্রান্সের জিডিপি 0.4%, এবং জার্মানির জিডিপি 0.2% বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউরোজোনের অর্থনীতির প্রত্যাশিতের চেয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ইউরোকে উল্লেখযোগ্য সমর্থন প্রদান করেছে।
অন্যদিকে মার্কিন সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনও রয়েছে এবং... মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর তুলনায় কমলা হ্যারিস মাত্র এক শতাংশে এগিয়ে আসেন। বর্তমানে ৪৪% ভোটার হ্যারিসকে সমর্থন করছেন, যেখানে ট্রাম্পের সমর্থন ৪৩%। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে হ্যারিসের সমর্থন ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, এবং উভিয় প্রার্থী প্রায় সমান অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা চীনের উপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ এবং নতুন বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে, যা EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের তাদের মুনাফা বাড়ানোর সুযোগকে ব্যাহত করেছে।
মার্কিন সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের বিপরীতমুখী ফলাফলও এই পেয়ারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। একদিকে, তৃতীয় প্রান্তিকে মার্কিন জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে, এবং অন্যদিকে, ADP থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে শক্তিশালী ছিল।
তৃতীয় প্রান্তিকে, মার্কিন জিডিপি 2.8% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে 3.0% বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছিল। স্মরণ করা যাক, দ্বিতীয় প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতি 3.0% এবং এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে 1.4% বৃদ্ধি পেয়েছিল। এর মানে হলো, যদিও দেশটির জিডিপি পূর্বাভাস অনুযায়ী বাড়েনি, তবেঁ এটি এখনও শক্তিশালী কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করছে। কোর পার্সোনাল কনজাম্পশন এক্সপেন্ডিচারস (কোর PCE), যা জ্বালানি এবং খাদ্যের মূল্য বাদ দিয়ে বিবেচনা করা হয়, বার্ষিক ভিত্তিতে 2.2%-এ নেমে এসেছে, যেখানে এই সূচক 2.০%-এ হ্রাস পাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
মার্কিন জিডিপি প্রতিবেদনটি ডলারের জন্য ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে (আমার মতে, এই প্রতিবেদনটি ডলারের পক্ষে কাজ করেছে)। তবে, ADP থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে কোনো সংশয়ের সুযোগ নেই। এই প্রতিবেদনটি স্পষ্টভাবে ডলারের ক্রেতাদের পক্ষে কাজ করেছে। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই ধারণা করেছিলেন যে ADP-এর প্রতিবেদন যা প্রায়শই আনুষ্ঠানিক শ্রমবাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের পূর্বাভাস হিসাবে কাজ করে, EUR/USD পেয়ারের বিক্রেতাদের জন্য হতাশাজনক হবে। পূর্বাভাসটি যথেষ্ট দুর্বল ছিল—মাত্র ১১০,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রত্যাশা করা হয়েছিল০। তবে, ADP জানিয়েছে যে ২৩০,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা নির্দেশ করে যে শুক্রবারের নন-ফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের ফলাফলও ইতিবাচক হতে পারে, যা ডলারকে শক্তিশালী সহায়তা দেবে। অক্টোবর মাসের জন্য নন-ফার্ম পেরোলের সংখ্যা ১১১,০০০ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। যদি আনুষ্ঠানিক ফলাফল ২০০,০০০-এর উপরে আসে, তাহলে আমরা আরেকবার ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখতে পারি। সর্বশেষ ADP প্রতিবেদনের ফলাফল এই সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
মজার বিষয় হলো, ইউরোজোনের শক্তিশালী জিডিপি এবং জার্মানির মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনের প্রতি EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম ছিল। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানির কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (CPI) বার্ষিক ভিত্তিতে 2.0% পর্যন্ত বেড়েছে। দুই মাসের পতনের পর, সমন্বয়কৃত সূচক 2.4% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। জার্মানির মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন প্রায়শই ইউরোজোনের প্রতিবেদনের সাথে সম্পর্কিত থাকে, তাই ইউরোজোন মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধির প্রত্যাশার করা যৌক্তিক। প্রাথমিক অনুমান অনুসারে, ইউরোজোনের সামগ্রিক CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচক 1.9% (1.7% থেকে) এবং কোর ইনডেক্স 2.7% পর্যন্ত বাড়তে পারে। এই প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত হবে।
সুতরাং, EUR/USD পেয়ার অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ইউরোজোনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে, জার্মানির মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সম্ভাব্যভাবে ইউরোজোন মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে চলেছে, যা এই পেয়ারের ক্রেতাদের পক্ষে কাজ করবে। এদিকে বিক্রেতারা মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী ফলাফল এবং ADP প্রতিবেদনের ইতিবাচক ফলাফল থেকে উপকৃত হতে পারে।
আমার মতে, এই পরিস্থিতিতে অক্টোবরের মার্কিন শ্রমবাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদন "গোল্ডকার্ড" হিসেবে কাজ করবে, যা হয়তো এই পেয়ারের মূল্যকে 1.07 রেঞ্জে নামিয়ে আনতে পারে অথবা EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা মূল্যকে 1.0880 রেজিস্ট্যান্স লেভেল (ডেইলি চার্টের বোলিঞ্জার ব্যান্ডের মধ্যম লাইন) ব্রেক করে 1.09 রেঞ্জ টেস্ট করাতে সক্ষম হবে। চলমান কারেকশন সত্ত্বেও লং পজিশনের পক্ষে কিংবা শর্ট পজিশন ওপেন করার পক্ষে কোনো শক্তিশালী যৌক্তিকতা নেই। সামষ্টিক পরিসংখ্যান পরিস্থিতি থেকে এটি বোঝা যাচ্ছে না যে কোনো নির্দিষ্ট দিকে এই পেয়ারের মূল্যের টেকসই মুভমেন্ট দেখা যাবে কিনা।